Sunday, April 6, 2014

এরাজ্যে লড়াই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারেরও: সাক্ষাৎকারে বললেন বিমান বসু


এবারের লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে গণতান্ত্রিক অধিকারকে
পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা এবং নৈরাজ্যের পরিবেশ থেকে
রাজ্যবাসীকে মুক্ত করার লড়াইও লড়ছেন বামপন্থীরা।
শনিবার গণশক্তিকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও সি পি আই (এম) পশ্চিমবঙ্গ
রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিমান বসু একথা বলেছেন

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গোটা দেশে একটি অ-কংগ্রেসী, অ-বি জে পি, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার লক্ষ্যে লড়াই করছেন বামপন্থীরা। এই  সরকার জনস্বার্থবাহী বিকল্প কর্মসূচী রূপায়ণে পথ চলবে। আমরা মনে করি এটা বাস্তবে সম্ভব, লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশই এর আগে এমন উদাহরণ তৈরি করেছে। একইসঙ্গে এবারের নির্বাচনে আমরা পশ্চিমবঙ্গে গত তিন বছরে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর যে তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে, তাকে বন্ধ করার লক্ষ্যেও লড়াই চালাচ্ছি। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবিক অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লড়াইও এই নির্বাচনী লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত। এরাজ্য থেকে সংসদে বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে এই লড়াই জোরদার হবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অজয় দাশগুপ্ত।

প্রশ্ন: ২০০৯সালে পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের আসনসংখ‌্যা কমে যাওয়ার পর বিশেষ করে কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থীরা প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে বলে প্রচার করে থাকে। এই অভিযোগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?

বিমান বসু: ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সংসদে বামপন্থীদের শক্তি কমায় ক্ষতি হয়েছে গণ-আন্দোলনের। ক্ষতি হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে জনস্বার্থবিরোধী নীতি কার্যকরী করতে বাধা দেওয়ার শক্তি দুর্বল হওয়ায়। কারণ, ২০০৪ সালে ৬১জন বামপন্থী সাংসদ থাকায় যেভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নীকরণ করা বা বেসরকারীকরণ করা, পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মানুষের ওপর বোঝা চাপানোর কাজে কার্যকরীভাবে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, তা আর এখন সম্ভবপর হচ্ছে না। অন্যদিকে, রেগা অথবা কৃষিঋণ মকুব করা ইত‌্যাদি জনস্বার্থবাহী প্রকল্প রূপায়ণে চাপ সৃষ্টি করাও সম্ভব হয়েছিল। এতে শুধু সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির শ্রমিক-কর্মচারীরাই নয় বা ঋণগ্রস্ত কৃষকরাই নয়, দেশের অর্থনীতিকে দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে পরিচালিত করার লক্ষ্যে চালিত করার চেষ্টা করা সম্ভব হচ্ছিলো। সংসদে বামপন্থীদের সংখ‌্যা কমে যাওয়ায় কর্পোরেট মহলের সুবিধা হয়েছে, গরিব সাধারণ মানুষের সর্বনাশ হয়েছে। তাইতো, বামপন্থীদের সংখ‌্যা কমাতে এবারও কর্পোরেট মহল উঠেপড়ে লেগেছে। তবে জনস্বার্থে দেশব‌্যাপী আন্দোলন-সংগ্রামের ময়দানে বামপন্থীরা আগেও যেমন প্রাসঙ্গিক ছিলেন, এখনও তেমনই আছেন।

প্রশ্ন: ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে  জাতীয় রাজনীতিকে বামপন্থীরা কোন অভিমুখে নিয়ে যেতে চাইছেন?

বিমান বসু: দেশের মানুষ গত দশ বছর ধরে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউ পি এ সরকারকে দেখেছেন। তার আগে ছয় বছর ধরে বি জে পি-র নেতৃত্বে এন ডি এ-সরকারকেও দেখেছেন। এই দুই সরকারই উদারীকরণের নীতি অনুসরণ করে চলেছে, গত দুই দশক ধরে যার বিষময় ফল গোটা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও আমরা উপলব্ধি করছি। জনসংখ্যার মুষ্টিমেয় অংশ এর সুফল পেয়েছে, আর ৮৬কোটি ৩০লক্ষ মানুষকে প্রতিদিন মাত্র ২০টাকায় জীবন নির্বাহ করতে হচ্ছে। দুটো ভারত তৈরি হয়েছে, একটা গরিব, নিঃস্বদের ভারত, আরেকটা বড়লোকদের ভারত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রত্যক্ষ সাম্প্রদায়িক প্রচারের মধ্যে দিয়ে দেশের মানুষকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে ঠেলে দেওয়া, যেটা বি জে পি করছে। তাই আমরা বামপন্থীরা চাইছি কেন্দ্রে একটি অ-কংগ্রেসী, অ-বি জে পি, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ে তোলা, যে সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থে বিকল্প কর্মসূচী রূপায়ণ করবে। এই লক্ষ্যে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।

প্রশ্ন: কিন্তু বামপন্থীরা যে সরকার গড়ার কথা বলছেন, তার নেতৃত্ব দেবে কে? কংগ্রেস এবং বি জে পি তো তাদের নেতা কে হবে, তা ঘোষণা করে দিয়েছে।

বিমান বসু: আমাদের কাছে নেতা নয়, নীতি বড়। নির্বাচনকে আমরা একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম বলে মনে করি, আমরা বলি নীতির লড়াই। এবারের নির্বাচনেই হঠাৎ করে দেখছি প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হলো। এসব যেসব দেশে প্রত‌্যক্ষ (ডাইরেক্ট) নির্বাচন আছে, সেখানে হয়। আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে যে দল বা জোট সংখ‌্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ফলপ্রকাশের পর তারা বসে নেতা নির্বাচন করবে এবং তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটা স্পষ্ট যে, এখন আর কোনও দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গড়া সম্ভব নয়। তাই কোয়ালিশন সরকার হলে, কোয়ালিশনের শরিকরা বসেই ঠিক করতে হবে কে নেতা।  

প্রশ্ন: গোটা দেশে বামপন্থীদের শক্তিবৃদ্ধির প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আপনারা প্রচারের কেন্দ্রে কোন কোন বিষয়কে আনতে চাইছেন?    

বিমান বসু: অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বামপন্থী আন্দোলন-সংগঠন যে রাজ্যগুলিতে প্রসারিত, তার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ এবং এরাজ্যে ৪২টি লোকসভা আসন রয়েছে। বামপন্থী আন্দোলনও এরাজ্যে ঐতিহ্যশালী। গত প্রায় তিন বছর সময়কালে তৃণমূল সরকার যেভাবে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা জরুরী। এই সময়ে ১৪৭জন বামফ্রন্ট নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন, বহু কর্মী আক্রমণে পঙ্গু হয়ে গেছেন, হাজার হাজার কর্মী ঘরছাড়া, মিথ‌্যা মামলার আসামী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লড়াইকে আমরা এই নির্বাচনী লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই। অন্যদিকে, গোটা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে নারী নির্যাতনসহ যে নৈরাজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, রাজ্যবাসীকে তার থেকে মুক্ত করার জন্যও আমরা লড়াই চালাচ্ছি। অবশ্যই, জনগণের আশু জরুরী দাবিগুলিকে পূরণ করার লক্ষ্যেও আমাদের প্রচার আন্দোলন চলবে। রাজ্যবাসীর কাছে এই সমস্ত বিষয় তুলে  ধরে আমরা ৪২টি কেন্দ্রে বামফ্রন্ট প্রার্থীদের জয়ী করার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রশ্ন: এবারের নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটিকে প্রার্থী করা হয়েছে। অথচ বামপন্থীরা সেরকম কাউকে প্রার্থী করেনি। কেন?

বিমান বসু: আমি আগেই বলেছি, নির্বাচন আমাদের কাছে রাজনৈতিক লড়াই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষের কাছে আমাদের কর্মীরা যান এবং রাজনৈতিক বিষয় তুলে ধরেন। এই জন্য আমরা বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক প্রচার পুস্তিকা প্রকাশ করেছি। অনেকেই আমাদের প্রশ্ন করেন, আপনারা সেলিব্রিটি কাউকে দাঁড় করান না কেন? আমাদের প্রার্থীদের বেশির ভাগই হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে পোড় খাওয়া, রাজনৈতিক বোধ ও বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন এবং যে নীতির দ্বারা সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব সেই কর্মযজ্ঞে যুক্ত থাকা ব্যক্তি। মুলত এই ধারার ব্যক্তিদের মধ্যে থেকেই আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন করা হয়ে থাকে। তবে কখনো ছাত্র-যুব আন্দোলন থেকে উঠে আসা কিছু নবীনকেও আমরা প্রার্থী করি।    

প্রশ্ন: রাজ্যে তৃণমূল সরকারের নেতা-নেত্রীদের দাবি হলো তাঁরা প্রতিশ্রুতির ৯০-৯৯শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলছেন। উন্নয়নের জোয়ারের কারণেই মানুষ তাঁদের ভোট দেবেন। এই প্রসঙ্গে আপনাদের বক্তব্য কী?

বিমান বসু: আমি সংবাদপত্রে বা টিভি-তে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের এই ধরণের সোচ্চার ঘোষণা শুনি, তখন হতবাক হয়ে যাই! একবার দেখেছিলাম, ২০০দিনে ৮০ভাগ কাজ হয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ কখনো সম্ভব! আর এখন বলা হচ্ছে আড়াই বছরে ৯৯ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে! অথচ এই সময়ে রাজ্যে ৮৯জন গরিব কৃষক দেনার জ্বালায় আত্মহত‌্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অসংখ্য গরিব কৃষক, বর্গাচাষী তাঁদের জমিতে ফসল তুলতে গিয়ে বাধা পেয়েছেন। অনেক কৃষক ধান, পাট, আলু চাষ করে ফসলের ন‌্যায্য দাম না পেয়ে চাষের এলাকা কমাতে বাধ্য হয়েছেন। আবার এই সময়কালে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষাক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলার জন্য নানান আশঙ্কার শিকার হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছেন। যারা চাকরি করছিলেন, তাদের অনেকের চাকরি অনিশ্চিত হয়েছে, নতুন চাকরির সুযোগ সঙ্কুচিত হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক কিছু চাকরি হলেও বিপুল সংখ্যক পদ শুন্য রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, তৃণমূল সরকারের শাসনে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিন আমার মা-বোনেদের ইজ্জত লুঠ হচ্ছে, তাঁদের মর্যাদাহানি হচ্ছে। এই যখন অবস্থা, তখন কোন মাপকাঠিতে আমরা ধরবো যে ৯৯শতাংশ কাজ হয়ে গেছে? হয়তো রাজ্যে নতুন শিল্প গড়ে তোলার ৯৯শতাংশ সম্ভাবনায় ইতি টানা হয়েছে!

প্রশ্ন: গত লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভা নির্বাচন ও পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচনেও পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের ফল খারাপ হয়েছে। পর্যালোচনায় অন‌্যান্য কারণের সঙ্গে সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও আপনারা চিহ্নিত করেছেন। এই দুর্বলতাকে কতটা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে?

বিমান বসু: আমরা আমাদের সংগঠনের দুর্বলতাকে কখনও আড়াল করতে চাই না। আমরা নির্বাচনী পর্যালোচনায় লক্ষ্য করেছি, অন‌্যান্য কারণের সঙ্গে সংগঠনের ঢিলে-ঢালা ভাবও খারাপ ফলের একটা অন্যতম কারণ। স্বাভাবিকভাবে আমরা চেষ্টা করছি, সন্ত্রাসের পরিবেশ থাকলেও সংগঠনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে। একাজ ওপর থেকে একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত সর্বত্র সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তাই রাজ্যগত এবং জেলাগতভাবে কয়েকবার বর্ধিত অধিবেশন করে সংগঠনের ঢিলেঢালা ভাব কাটানো ও বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় কর্মীবাহিনীকে আড়ষ্টতামুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছেএকইসঙ্গে, ধারাবাহিক রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কর্মসূচী নিয়ে এবং নিরন্তর মতাদর্শগত রাজনৈতিক শিক্ষার চর্চা অব‌্যাহত রেখে কমিউনিস্ট ও বামপন্থী গণআন্দোলনের লক্ষ্যে পথ চলতে হচ্ছে।

প্রশ্ন: গত পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সন্ত্রাসের পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাসের কৌশল কতটা কার্যকরী হবে বলে আপনি মনে করেন? এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী সন্তোষজনক?

বিমান বসু: আমরা এখনো মনে করি, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে মনোনয়ন পেশে বাধা থেকে শুরু করে ভোট লুঠ করা হয়েছে, ঠিক সেরকমটাই লোকসভা নির্বাচনেও হবে, এটা হয়তো বা সত্য নাও হতে পারে। ইতোমধ্যে ভোটারদেরও কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরাও মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে বারবার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জনগণও তাদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই উদ্যোগী হবেন এবং নিজেদের কৌশলেই তৃণমূলী সন্ত্রাসের কৌশলকে পরাস্ত করতে অগ্রসর হবেন বলে প্রত‌্যাশা করছি। আমরা ‌আশা করবো, নির্বাচন কমিশনও তাদের উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ করবে।

প্রশ্ন: আপনারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী লড়াই হবে মুখ্যত বামপন্থীদের সঙ্গে শাসক দল তৃণমূলের। কিন্তু রাজ্যের ৩-৪টি জেলায় কংগ্রেস এখনো প্রধান শক্তি। অন্যদিকে, গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির নতুন করে উত্থানের প্রেক্ষিতে বি জে পি-ও এরাজ্যে মাথা তুলতে চাইছে। তৃণমূলের সঙ্গে এই দুই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াইকে আপনারা কিভাবে দেখছেন?  

বিমান বসু: এবারের নির্বাচনে রাজ্যের ৪২টি আসনেই বামফ্রন্ট, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং বি জে পি প্রার্থী দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, কংগ্রেস বা বি জে পি-র সঙ্গে সব আসনে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এর আগেও আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, কোথাও কোথাও তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের, আবার কোথাও তৃণমূলের সঙ্গে বি জে পি-র তলে তলে বোঝাপড়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি কেন্দ্রেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছি, কোনো ভোট ভাগাভাগির অঙ্কে মাথা ঘামানো যাবে না, বামফ্রন্টের পক্ষে ভোট বাড়িয়ে জয়লাভের জন্য চেষ্টা করতে হবে। সেই অনুযায়ী নির্বাচনী সংগঠনকেও আটোসাঁটো করতে হবে। তবে এটাও ঠিক, ৪২টি কেন্দ্রের কোথাও কোথাও কংগ্রেস ভীষণভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে। আবার কয়েকটা আসনে বি জে পি-ও জোর লড়াই দিতে চাইছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই রাজনৈতিকভাবে এদের মোকাবিলা করে বামফ্রন্টের পক্ষে আমরা জয়লাভের লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছি

প্রশ্ন: বি জে পি একদিকে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করছে। তাছাড়া বিভিন্ন মহল থেকে একটা অভিযোগ রয়েছে যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সমস্যার সমাধানে বি জে পি আদৌও আগ্রহী নয়। বরং ওদের নীতি অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলেন।

বিমান বসু: বি জে পি যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নীতি নিয়ে চলে, তাতে শুধু মুসলিম সম্প্রদায়েরই নয়, হিন্দু সমাজেরও ক্ষতি হয়। কারণ এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিষ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যা আমাদের সমাজের ঐক্য, সংহতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে দুর্বল করে। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দেশের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এরমধ্যে বেশকিছু এলাকায় ছিটমহল সমস্যা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে জলবন্টন সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক সমস্যা। দুই দেশের স্বার্থেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। বাংলাদেশে মৌলবাদী শক্তির উত্থান হলে এখানেও মৌলবাদীরা মাথাচাড়া দেয়। অতীত দিনে যাঁরা বাংলাদেশে ছিলেন বর্তমানে এই দেশে আছেন তাঁরা এই সমস্ত ঘটনায় উদ্বিগ্ন হনতাঁরা চান সম্প্রীতির পরিবেশ। বি জে পি এটা চায় না। আমরা সবসময়ই চাই দুই দেশের সমস্যার ক্ষেত্রগুলি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ভিত্তিতে আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধান হোক।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। এবারের নির্বাচনে বামফ্রন্ট কতটা ঐক্যবদ্ধ ও প্রত্যয়ী হয়ে লড়ছে?

বিমান বসু: এবার প্রতিটি কেন্দ্রে বামফ্রন্ট অতীতের তুলনায় অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির মধ্যে বোঝাপড়া অনেক বেশি উন্নত। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যেখানে যে দলেরই প্রার্থী থাক না কেন, বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির কর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে শামিল রয়েছেন। বামফ্রন্টগতভাবে নিজেদের যুক্ত রেখে নির্বাচনী অভিযান চালাচ্ছেন।


 http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=54278

No comments: